বিস্তারিত
পারিলঃ ভাষা শহীদ রফিক যে গ্রামে বেড়ে উঠেছেন।
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভূলিতে পারি"। ছোট বেলা থেকে এই শোকের গানটি গাইতে গাইতে খালি পায়ে কতবার যে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়েছি তা মনে নেই, তাদের এই ত্যাগের কথা মনে পড়লে সব সময় শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসতো। স্কুল জীবনে শুধু এই সব ভাষা শহীদের নাম বইয়ের মধ্যে পড়েছি এবং সীমাবদ্ধ ছিল তাদের সর্ম্পকে জানার গন্ডিও। ইচ্ছে হতো ওদের বেড়ে উঠা জীবন সর্ম্পকে জানার, এ দেশের কোন গ্রামে, কোন এলাকায়, কাদের সঙ্গে বড় হয়েছেন এই সব মহান জাতীয় বীররা।
আমি প্রথম যখন মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে বেড়াতে যায়, তখন দেখি ভাষা শহীদ রফিকের গ্রামের বাড়ী এই এলাকায়। মনের মধ্যে তখন ইচ্ছেটা প্রবল হয়ে উঠলো তার গ্রাম সর্স্পকে জানার এবং তাঁর গ্রামের বাড়ী ঘুরে অনেক কিছু জানলাম। শোকের মাসের প্রথম দিনে আমার জানা বিষয় গুলো আপনাদের সাথে ছবিসহ শেয়ার করলাম।
পরিচিতিঃ ভাষা শহীদ রফিক। যার পুরো নাম রফিক উদ্দিন আহমদ। পিতার নাম আবদুল লতিফ। জন্ম তারিখ-৩০শে অক্টোবর ১৯২৬ সাল।
গ্রামের নাম-পারিল । বতর্মানে যার নামাকরন করা হয়েছে রফিকনগর। ইউনিয়ন-বলধারা, থানা-সিঙ্গাইর, জেলা-মানিকগঞ্জ। খুব সুন্দর সবুজ ফসলী একটি গ্রাম, যে গ্রামে সারা বৎসর ধান, পাট ও সবজির আবাদ হয়। ভাষা শহীদ রফিক পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিলেন। তিনি তার বাড়ী থেকে ৭ মাইল দুরে অবস্থিত বায়রা উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিকুলেশ পাশ করেন ১৯৪৯ সালে। পরে মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজ ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন।
গ্রামে বিভিন্ন লোকের সাথে কথা বলে যে টুকু জানতে পেরেছি শহীদ হওয়ার কয়েক দিন পর ভালবাসার মানুষের সাথে তার বিয়ের দিনক্ষন ঠিক ছিল। সেই উপলক্ষ্যেই বিয়ের বাজার সদায় করার জন্য ঢাকায় যাওয়া। কিন্তু এই মহান ব্যক্তি যখন শুনতে পেলেন বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার দাবীতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে থেকে মিছিল বের হবে তখন তিনি ছুটে যান এই মিছিলে। তৎকালিন সরকার কর্তৃক আরোপিত ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারী ছাত্র জনতার সাথে তিনিও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ গ্রহন করেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের হোষ্টেল প্রাঙ্গন ও মিছিলের পদভারে প্রকম্পিত রাজপথ। পাকিস্তান সরকার দিশেহারা। র্নিবিচারে ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষন। একটি গুলি রফিক উদ্দিনের মাথায় বিদ্ধ হয়, ঘটনাস্থলেই তিনি শহীদ হন।
নিজের ভালবাসার মানুষকে ফেলে, নতুন জীবনের সমস্ত আশাকে বিলিয়ে দিয়ে তিনি আমাদের মায়ের মুখের ভাষাকে ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন। শহীদ রফিক আর কোন দিন তার ভালবাসার "পারিল" গ্রামে ফিরে যেতে পারেনি। মৃত্যুর পর তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি ঢাকার বুকেই চিরনিদ্রায় শায়িত। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। সরকারী ভাবে ২০০৬ সালে তারঁ "পারিল" গ্রামে ভাষা শহীদ পাঠাগার ও স্মৃতি যাদুঘর স্থাপন করা হয়। যেখানে তার ব্যবহৃত জিনিষপত্র ও প্রচুর বই আছে। তারও আগে প্রশিকার উদ্দ্যোগে তারঁ বাড়ী সংলগ্ন একটি ছোট লাইব্রেরী গঠন করা হয়। যেখানে মূলত উনার স্মৃতি গুলো প্রথম থেকে সংরক্ষন করার ব্যবস্থা করা হয়।
কি ভাবে যাবেন পারিল গ্রামঃ- ঢাকা থেকে পারিলের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিঃমিঃ। ঢাকার গাবতলী থেকে বালিরটেকের বাসে উঠতে হবে। নামতে হবে সিঙ্গাইর বাস ষ্টেশন পার হয়ে ঋষিবাড়ী নামক স্থানে। এই পর্যন্ত বাস ভাড়া ৩৫ টাকা। তারপর ঋষিবাড়ী থেকে পারিল বা রফিকনগর ৬কিঃমিঃ পথ। আপনি রিক্সা অথবা নছিমনে যেতে পারেন। রিক্সা ভাড়া-২০টাকা এবং নছিমন ভাড়া ১০ টাকা নিবে জনপ্রতি।